নিবন্ধন বা অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানছে না সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন আবেদন ফর্মের শর্তাবলিও।
নগরীতে শতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশেরই নেই ডিপ্লোমাধারি টেকনেশিয়ান, নার্স বা দক্ষ চিকিৎসক।
নগরীর নতুন রাস্তা মোড় এলাকার বাসিন্দা সোনিয়া শারমিন অভিযোগ করেন, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে যান তিনি। সেখান থেকে দেয়া কিছু পরীক্ষা করতে একজন পরিচিত আত্মীয়ের মাধ্যমে যান খুমেক হাসপাতালের পাশের উদয়ন ডায়াগনস্টিকে। সেখানে প্রায় ২ হাজার ৩০০ টাকা খরচ করে প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা করান। পরবর্তীতে উদয়ন ডায়াগনস্টিক থেকে করা পরীক্ষার রিপোর্টে বলা হয় তার শরীরে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু পরে একই পরীক্ষা তিনি শেখ আবু নাসের হাসপাতালে করান মাত্র ৫৮০ টাকায়। সেখানে তার শরীরে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।
ভুক্তভোগী আরও অনেকের অভিযোগ, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ইচ্ছা মতো রোগীদের কাছ থেকে ফি নেয়া হয়। আবার সঠিক চিকিৎসাসেবাও মিলছে না বেশির ভাগ জায়গা থেকেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক জানান, শুধুমাত্র অনলাইনে নিবন্ধনের আবেদন করে স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা কুলসুম বলেন, ‘এখন আমাদের কাছে কেউ আবেদন করেন না। তারা সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনলাইন পেজে আবেদন করেন এবং যাদের বড় যোগাযোগ আছে তারাই নিবন্ধন পান। খুলনায় সব মিলিয়ে নতুন করে ৭-৮টি লাইসেন্স থাকতে পারে। অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা বেসরকারি হাসপাতালের কোনো নিবন্ধন হয়নি।’
সুজনের খুলনা বিভাগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-খুদা জানান, খুলনার শতকরা ৯৫ ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেরই কোনো নিবন্ধন নেই।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, ‘মহানগরীর তালিকা আমাদের কাছে নেই, তবে জেলায় এ পর্যন্ত ৪৬টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ৫৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। এদের অনেকেরই নিবন্ধন নেই। নতুন যারা নিবন্ধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন তাদের এখনও কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি।’
দ্রুত এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং অনিয়ম পেলে তাদের নিবন্ধনের আবেদন বাতিল করাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আমি করোনায় অসুস্থ ছিলাম। আগামী রবিবার অফিস করব এবং নিবন্ধনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’